এসজিডি বাস্তবায়নে বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার আহবান

Nov 06 2017

“পার্টনারিং ফর রিডিউসড ইনইকুয়্যালিটিস: হাও বিজনেস ক্যান কন্ট্রিবিউট টু দ্য ইউএন এসজিডি” শীর্ষক একটি প্যানেল আলোচনায় আজ বক্তারা জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যগুলো বাস্তবায়ন ও তাতে বেসরকারি খাতের অংশগ্রহনের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেন।

জিপি হাউজে আয়োজিত এই প্যানেল আলোচনায় অংশগ্রহন করেছেন সরকারি বিভিন্ন  সংস্থা, উন্নয়ন সংস্থা এবং বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিরা। যৌথ উদ্যোগে এই অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে গ্রামীণফোন লিমিটেড এবং টেলিনর গ্রুপ।

আলোচনায় অংশগ্রহনকারীদের মধ্যে ছিলেন ইউএনডিপি বাংলাদেশ এর প্রজেক্ট অ্যাডভাইজর ও এসজিডি লিড ফখরুল আহসান, ইউনিসেফ বাংলাদেশ এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার ও কোঅর্ডিনেটর থমাস জর্জ, ফরেন ইনভেসটর্স চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাসট্রিজ (এফআইসিসিআই) এর প্রেসিডেন্ট রূপালি চৌধুরী, অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন প্রোগ্রাম এর পলিসি অ্যাডভাইজর অনির চৌধুরী, ডি-নেট বাংলাদেশ এর সিইও ড: অনন্য রায়হান, ব্র্যাক ও ব্র্যাক ইন্টারন্যাশনাল এর স্ট্র্যাটেজি, কমিউনিকেশন অ্যান্ড এমপাওয়ারমেন্ট এর সিনিয়র ডিরেক্টর আসিফ সালেহ এবং গ্রামীণফোন এর সিইও মাইকেল ফোলি। অনুষ্ঠানটি সভাপতিত্ব করেন টেলিনর গ্রুপ এর গ্রুপ সাসটেইনাবিলিটি বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট ওলা ইয়ো টান্দ্রে।

এসডিজি ইমপ্লিমেনটেশন এ্যান্ড মনিটরিং কমিটির আহবায়ক মো. আবুল কালাম আজাদ উক্ত প্যানেলে উপস্থিত না থাকতে না পারলেও তিনি ভিডিও ম্যাসেজের মাধ্যমে সরকারি ও বেসরকারি খাতের সম্মিলিত পদক্ষেপের চাহিদার কথা এবং গ্রামীণফোন ও টেলিনরকে এধরনের উদ্যোগ নেয়ায় ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। 

ইউএনডিপি বাংলাদেশ এর প্রজেক্ট অ্যাডভাইজর ও এসজিডি লিড ফখরুল আহসান বলেন, “বর্তমানে বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নে বেসরকারি খাতের অবদান আছে ৭৮ শতাংশ, আর তাই এ খাতকে বাদ দিয়ে এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব না। ইউএনডিপি সরকারি ও বেসরকারি খাতকে সম্মিলিতভাবে কাজ করার প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে দিয়েছে, ফলে উভয় খাত নিজেদের চাহিদাগুলো নিয়ে আলোচনা করে দেশের উন্নয়নের লক্ষ্যে সে অনুযায়ী নীতি নির্ধারণ করতে পারবে।”

ইউনিসেফ বাংলাদেশ-এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার ও কোঅর্ডিনেটর থমাস জর্জ বলেন, “সমান্তরাল গতিতে বাংলাদেশের সকল এলাকা এগোতে পারছে না, আর তাই স্থানীয় চাহিদা অনুযায়ী এসডিজির কর্মকান্ড  পরিচালনা করা উচিৎ।” 

ফরেন ইনভেসটর্স চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাসট্রিজ (এফআইসিসিআই) এর প্রেসিডেন্ট রূপালি চৌধুরী বলেন, “এফডিআই-এর পাশাপাশি কর্মসংস্থান তৈরি করার মধ্য দিয়েই দেশের প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব। আমাদের অসংখ্য সফলতার গল্প রয়েছে যেগুলো স্থানীয় ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সবার সামনে তুলে ধরতে হবে, যাতে করে   বাংলাদেশে বিনিয়োগের ব্যাপারে আগ্রহ তৈরি হয়। তিনি মনে করেন  বিনিয়োগকারীদের সাথে কাজ করার সময় বাংলাদেশের সরকারের আরো স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে এবং নীতিমালা সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে, অন্যথায় কাংক্ষিত বিনিয়োগ পাওয়া যাবে না।

ব্র্যাক ও ব্র্যাক ইন্টারন্যাশনাল এর স্ট্র্যাটেজি, কমিউনিকেশন অ্যান্ড এমপাওয়ারমেন্ট এর সিনিয়র ডিরেক্টর আসিফ সালেহ মনে করেন, দেশের উন্নয়নে বেসরকারি খাতের চাহিদার উপর গুরুত্ব দিতে হবে তাই ভবিষ্যত উন্নয়নের চাহিদা পূরণে দক্ষ জনবল তৈরিতে কাজ করছে ব্র্যাক।

ডি-নেট বাংলাদেশ এর সিইও ড: অনন্য রায়হান বলেন, “সম্পদের বরাদ্দ আরো সহজ করতে হবে  এবং সরকারি সম্পদ ব্যবহারে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের সুযোগ বাড়াতে হবে, যাতে তারা দেশের সার্বিক উন্নয়নে কার্যকরভাবে অংশ নিতে পারে।”

গ্রামীণফোনের সিইও মাইকেল ফোলি বলেন, “প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেশের মানুষ ও উদ্যোক্তাদের জন্য আমাদের সুযোগ তৈরি করতে হবে, যাতে করে তারা বাজারের নতুন বাস্তবতার সম্মুখিন হতে পারে। যদি মানুষের কাজ না থাকে তাহলে বড় সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানেরও কোন কাজ থাকবে না” 

অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন প্রোগ্রাম এর পলিসি অ্যাডভাইজর অনির চৌধুরী সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতাকে স্বাগত জানান এবং বেসরাকির অংশগ্রহণ উন্নয়ন খাতে আরো জবাবদিহিতা বাড়ায় বলে মতামত ব্যক্ত করে বলেন, “মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যে বেসরকারি খাত বিনিয়োগ করে বলে তারা সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর তুলনায় দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে থাকেন এবং সম্পদের উপযুক্ত ব্যবহার নিশ্চিৎ করেন।" ডিজিলাইজেশন কাজে দক্ষতা বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়, ফলে সেবার মানেও তার প্রভাব পড়ে উল্লেখ করে তিনি বলেন," যদিও সরকার এতদিন তার বিভিন্ন সেবা  ডিজিটাল পদ্ধতিতে জনগণের কাছে নিয়ে যেতে স্বচেস্ট ছিল, কিন্তু এখন থেকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠনগুলোকে ডিজিটাল মাধ্যমে সেবা প্রদানে সরকার কাজ করছে যা আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এড়াতে সহায়তা করবে।”   

গ্রামীণফোন এবং টেলিনর গ্রুপ এর প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে এসজিডি-১০, বৈষম্য হ্রাস এর উদ্দেশ্যে কাজ করা। আজ এই লক্ষ্য অর্জনে তারা ডিজিটাল সেবা এবং তথ্য অধিকার নিশ্চিত করছে। এসজিডি ১০ কার্যকরি করার জন্য প্রতিষ্ঠানটির লক্ষ্যমাত্রা তুলে ধরেন টেলিনর গ্রুপ এর হেড অফ সাসটেইনাবিলিটি মাই ওল্ডগার্ড।

গ্রামীণফোনের সাসটেইনাবিলিটি উইক এর আওতায় এই প্যানেল আলোচনা আয়োজিত হয়েছে। গত সপ্তাহে টেলিনর গ্রুপ এর সিইও ও প্রেসিডেন্ট সিগভে ব্রেক্কে সাসটেইনাবিলিটি উইক এর উদ্বোধন করেন। প্রতিষ্ঠানটির কর্মী এবং অন্যান্য অংশীদারদের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির টেকসই উদ্যোগগুলো সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির উদ্দেশে সাসটেইনাবিলিটি উইক পালন করা হয়।

grameenphone