হোয়াইটবোর্ডের পৃষ্ঠপোষকতায় গুগল ডেভলপার ডেভফেস্ট বাংলাদেশ ২০১৭ অনুষ্ঠিত

Nov 19 2017

গুগল ডেভলপার গ্রুপ (জিডিজি) ঢাকার আয়োজনে গতকাল (১৮ নভেম্বর) গ্রামীণফোনের প্রধান কার্যালয় জিপি হাউজে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল গুগল ডেভলপার ডেভফেস্ট বাংলাদেশ ২০১৭। হোয়াইটবোর্ডের পৃষ্ঠপোষকতায় এ আয়োজনে সহযোগী হিসেবে কাজ করেছে প্রিনিউর ল্যাব। সম্মানিত আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। তিনি গুগল ডেভলপার গ্রুপ কমিউনিটির সদস্যদের সাথে অনলাইন মার্চেন্ট অ্যাকাউন্ট উদ্বোধন করেন।

গুগলের প্রযুক্তির উপর গুরুত্ব দিয়ে ডেভলপারদের জন্য বিশ্বব্যাপী কমিউনিটিচালিত আয়োজন জিডিজি ডেভফেস্ট। এ আয়োজনে ডেভেলপার কমিউনিটির চাহিদা বিবেচনায় রেখে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ডেভলপাররা অভিনব সব ধারণা নিয়ে কাজ করে থাকেন। ডেভফেস্টের প্রতিটি আয়োজনেই থাকে ভিন্নতা, যেখানে ডেভলপাররা একে অন্যের ধারনা আদান-প্রদানের মাধ্যমে চমৎকার নতুন ধারণার উৎপত্তি ঘটায়।

গুগল ডেভলপার গ্রুপ (জিডিজি) ঢাকার আয়োজনে এবং প্রিনিউর ল্যাবের সহযোগিতায় জিপি হাউজে অনুষ্ঠিত গুগল ডেভলপার ডেভফেস্ট বাংলাদেশ ২০১৭- এ সারাদেশ থেকে ৩শ’ জন ডেভলপার অংশগ্রহণ করেন। এ আয়োজনটির পৃষ্ঠপোষকতা করেছে হোয়াইট বোর্ড। .

এই উদ্যোগের প্রতিটি আয়োজন হয়ে থাকে আগেরটির থেকে ভিন্ন। আয়োজকদের মূল বিশ্বাস, ডেভলপাররা যখন বুদ্ধি বিনময় করতে একত্রিত হন তখন অসামান্য ঘটনা ঘটা সম্ভব।

জিপি হাউজে এ আয়োজনের সাথে একই সঙ্গে কোডিং সেশন কোডল্যাব অনুষ্ঠিত হয়| এছাড়াও, এর পাশাপাশি, ছয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনটি করে সেশনের মাধ্যমে সর্বমোট ১৮টি সেশন অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে ১৮শ’ জন অংশগ্রহণকারী অংশগ্রহণ করে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হল: নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যাল, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। অনুষ্ঠান চলাকালে জিপি হাউজে ছয়টি সেশন ও দু’টি প্যানেল আলোচনাও অনুষ্ঠিত হয়।

গ্রামীণফোনের হেড অব ট্রান্সফরমেশন কাজী মাহবুব হাসান, টেলিনর হেলথের প্রধান নির্বাহী সাজিদ রহমান, বিডিজবস’র প্রধান নির্বাহী ফাহিম মাশরুউ, ইউএনডিপি বাংলাদেশের লিন্ডা জার্মানিসের মতো বিশেষজ্ঞ নেতৃত্বদানকারীরা প্যানেল আলোচনায় আলোচক হিসেবে উপস্থিত থেকে বাংলাদেশে ভবিষ্যৎ প্রযুক্তি বিষয়ক ডেভলপারদের সুযোগ ও সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেন। .

এ নিয়ে গ্রামীণফোনের হেড অব ট্রান্সফরমেশন কাজী মাহবুব হোসেন বলেন, “আমাদের বুঝতে হবে যে আমাদের দেশ ডিজিটাল সার্ভিস ও স্টার্ট-আপ নিয়ে অনেক ইতিবাচক হয়ে উঠেছে। এর জন্য সবচেয়ে বেশী কৃতজ্ঞতার দাবীদার আমাদের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ও A2i এর মত মত কিছু কোম্পানী।” তিনি আরো যোগ করেন যে, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রনালয় ও আমাদের সরকার দেশের প্রযুক্তি শিল্পের প্রতি আগের চেয়ে এখন আরো ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি দিচ্ছেন।

কাজী আরো বলেন, “বাংলাদেশ এই মুহূর্তে এমন এক সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে যেখানে আমাদের বুঝতে হবে যে, বিকল্পধারার পেশা ও অর্থনীতিতে প্রযুক্তির ব্যবহারের জন্য ইকোসিস্টেম তৈরি করা অনেক বেশি প্রয়োজন। গ্রামীনফোন বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ প্রযুক্তি বিষয়ক কোম্পানী হওয়ার কারণে ডিজিটাল ইকোসিস্টেম তৈরিতে তাঁদের দায়িত্ব সম্পর্কে অবহিত।”

টেলিনর হেলথের প্রধান নির্বাহী সাজিদ রহমান বলেন, “অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে যেকোন প্রতিষ্ঠান শুরু করাটাই একটি ঝুঁকির ব্যাপার। আমাদের উচিত নতুন উদ্যোক্তাদের এই ঝুঁকি কমিয়ে নিরাপদ উদ্যোগ নিশ্চিতের উপায় নিয়ে কাজ করা এবং এইসব উদ্যোগের বানিজ্যিক সফলতা নিয়ে আসতে সাহায্য করা।” তিনি স্টার্ট-আপ গুলোর ক্ষেত্রে আরেকটি সমস্যা উল্লেখ করেন তা হলো দক্ষ লোকবলের অভাব। তাঁর মতে, যেকোন শিল্পের উন্নয়নের জন্য সেই শিল্পে কিছু দক্ষ লোকবল প্রয়োজন। .

বিডিজবস’র প্রধান নির্বাহী ফাহিম মাশরুর তার আলোচনায় বলেন, “ভারত বা চীনের সাথে তুলনায় আমাদের বাজার খুবই ছোট। ইন্টারনেট ও স্মার্টফোনের বাজার দখল খুবই গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র। ১০ বছর আগে প্রতিযোগীতার কারণে স্টার্ট-আপ গুলো আজকের তুলনায় অনেক বেশী সফলতা পেয়েছিলো, কারণ তখন সারা বিশ্ব এতটা ‘গ্লোবালাইজড’ ছিলোনা। আজকে যারা নতুন আসবে তাঁদের জন্য ক্ষেত্র অনেক কঠিন কেননা ইতিমধ্যেই বড় কোম্পানী গুলোর প্রযুক্তিগত সামর্থ্য।” তিনি যোগ করেন, “এই সমস্যার সমাধান লুকিয়ে আছে বড় অংকের ডাটার সঠিক ব্যবহারের মধ্যে। এখানেই নতুন উদ্যোক্তারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মার খেয়ে যায়। ডাটার সঠিক ব্যবহার খুব গুরুত্বপূর্ণ।”

ইনোভেশন্স হাব, ইউএনডিপি বাংলাদেশের প্রজেক্ট ম্যানেজার লিন্ডা জার্মানিস বলেন, “ডিজিটাল ইকোসিস্টেমের উন্নয়নের জন্য দক্ষতার উন্নয়ন, প্ল্যাটফর্ম পাওয়া ও নির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে এগোনো দরকার। দক্ষ লোকবলের প্রশিক্ষণের কথা ছাড়াও অনলাইনের পাওয়া তথ্য অনুযায়ী প্রতি সপ্তাহে ১,০০,০০০ অনলাইন কাজের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। বেকারত্ব ঘোচানোর এক সুবর্ণ সুযোগ তো এখানেই রয়েছে। নতুন উদ্যোগ যেমন দরকার, আইসিটি ফ্রিল্যান্সিং ও সমান ভাবে দরকার। স্টার্ট-আপ এর ক্ষেত্রে প্ল্যাটফর্ম ও নির্দেশনা পেলে তা বেশিরভাগ সময় সফল হয়।” .

আরেকটি প্যানেল আলোচনায় খাত বিশেষজ্ঞরা অ্যান্ডয়েড ডেভলপমেন্ট নিয়ে আলোচনা করেন। এ প্যানেল আলোচনায় আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাইন্ডফিসার গেমস ইনকর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী জামিলুর রশিদ, রাইজআপ ল্যাবসের প্রধান নির্বাহী এরশাদুল হক, আইসিটি ডিভিশনের মোবাইল গেম প্রকল্পের ডিপিডি সেলিম খান, অডাসিটি’র প্রধান নির্বাহী সিদ্দিক আবু বকর এবং ডেলের সল্যুশনস আর্কিটেকচার বিভাগের ডিরেক্টর জনাব জামান।

এদিন ইউএক্স এবং গেমিং নিয়ে সেশন ছাড়াও, একটি লাইভ কোডিং সেশন পরিচালনা করেন টেলিনর হেলথের আনাম আহমেদ এবং অনিরুদ্ধ অধিকারী। এ সেশনে তারা ২০ মিনিটে একটি অ্যাপের কোড তৈরি করেন।

এছাড়াও, একইদিনে গ্রামীণফোনের ইনোভেশন প্ল্যাটফর্ম হোয়াইট বোর্ড ছয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাক্টিভেশন ইভেন্ট পরিচালনা করে। এ আয়োজন চলতি বছরে অনুষ্ঠিতব্য ডেভফেস্ট-এর দিকে অগ্রসর করবে, যা গুগল ডেভেলপার গ্রুপ ঢাকা ও প্রিনিউর ল্যাবের সম্মিলিত একটি আয়োজন।

grameenphone