গ্রামীণফোন গ্রাহকদের জন্য চালু হলো বিনামূল্যের স্বাস্থ্যসেবা টনিক

জুন ০৫ 2016

স্বাস্থ্য বিষয়ক তথ্য, ডাক্তারদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন ও আর্থিক সুবিধাদানের  মাধ্যমে ‘ভালো থাকা’ অর্জন করতে সদস্যদের সহায়তা করবে বিনামূল্যের ‘টনিক’ সেবা

গ্রামীণফোন এবং টেলিনর হেলথ, রবিবার ৫ জুন, ২০১৬ এ বাংলাদেশের গ্রাহকদের জন্য নতুন ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা ‘টনিক’ চালু করেছে। বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, এমপি, এবং বিটিআরসি চেয়ারম্যান ডঃ শাহজাহান মাহমুদ, এবং  এদেশের স্বাস্থ্য খাতে টেলিনর হেলথ এর সহাযোগীদের উপস্থিতিতে স্থানীয় একটি হোটেলে টনিক উদ্বোধন করা হয়।

স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং চিকিৎসকসহ সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণে ব্যাপক গবেষণা ও ধারণা উন্নয়নের পথ ধরে সষ্টি হয়েছে টনিক। টনিকের লক্ষ্য, বাংলাদেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠির সুস্বাস্থ্য বিষয়ক বিভিন্ন বিষয়ে প্রাসঙ্গিক থাকা।

টনিক সদস্যরা চার ধরনের সুবিধা পাবেন: ‘টনিক জীবন’-এর মাধ্যমে টনিক সদস্যরা এসএমএস, ওয়েব ও ফেসবুকের মাধ্যমে প্রতিদিনকার সুস্থজীবন যাপনে ভালো খাওয়া, সক্রিয় থাকা এবং মানসিকভাবে সজীব থাকা নিয়ে বিভিন্ন টিপস ও তথ্য পাবেন। ‘টনিক ডাক্তার’ সদস্যদের সুযোগ করে দিবে সপ্তাহের সাত দিন ২৪ঘণ্টা ফোনের মাধ্যমে অভিজ্ঞ ডাক্তারের তথ্যবহ ও বন্ধুত্বপূর্ণ পরামর্শ পাওয়ার। ‘টনিক ডিসকাউন্ট’ দেশজুড়ে স্বনামধন্য ৫০টিরও বেশি হাসপাতালে, হাসপাতাল ফি-এর ওপর সর্বোচ্চ ৪০শতাংশ পর্যন্ত ডিসকাউন্টের সুযোগ করে দিবে।  ‘টনিক ক্যাশ’-এর মাধ্যমে এর সদস্যরা তিন রাত কিংবা তারও বেশি হাসপাতালে প্রদত্ব বিল থেকে ৫শ’ টাকা পরিশোধ করা হবে।  

এ নিয়ে টেলিনর গ্রুপের ইভিপি ও প্রধান বিপণন কর্মকর্তা বিবেক সুদ বলেন, ‘বাংলাদেশ ও এশিয়ার দেশগুলোর প্রতি টেলিনরের দায়বদ্ধতার একটি উদাহরণ হচ্ছে টনিক। প্রায় দু’ বছর  গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করার ফলে বাংলাদেশের সমাজের সাথে আমার গভীর যোগাযোগ ও বোঝাপড়া তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশে টনিক চালু হওয়া  আমার জন্য খুবই  আনন্দের বিষয়। প্রযুক্তিগত জ্ঞান ও স্বাস্থ্যখাতে গভীর দক্ষতার মিশেলে তৈরি এই সেবা নিয়ে আমরা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছানো এবং জাতীয় স্বাস্থ্যব্যবস্থায় আরও ইতিবাচক আবদান রাখার ব্যাপারে দারুণ রোমাঞ্চিত।

গ্রামীণফোনের ৫৬ মিলিয়ন গ্রাহক  বিনামূল্যে টনিকের সাথে যুক্ত হতে এবং নিজ নিজ ‘ভালো থাকার মাস্টার প্ল্যান’ অর্জনে এর বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা কাজে লাগাতে পারবেন।

গ্রামীণফোনের যেকোনো গ্রাহক ইউএসএসডি *৭৮৯# নাম্বারে ডায়াল করে অথবা www.mytonic.com এই ওয়েবসাইটে গিয়ে কিংবা ৭৮৯ নাম্বারে কল করার মাধ্যমে বিনাখরচে টনিকের সাথে যুক্ত হতে পারবেন। একজন গ্রাহক শুধু একবার টনিকের সাথে যুক্ত হলেই হবে। পরবর্তী মাসে সদস্যপদ অব্যাহত রাখতে গ্রাহককে অবশ্যই তার গ্রামীণফোন সিম এর মাধ্যমে ফোন কল, এসএমএস অথবা ডাটা প্যাকেজ ব্যবহার করতে হবে। গ্রাহকরা বিনামূল্যে  ‘টনিক জীবন’, ‘টনিক ডিসকাউন্ট’ ও ‘টনিক ক্যাশ’ সুবিধা পাবেন। শুধুমাত্র ‘টনিক ডাক্তার’ সেবা নেয়ার জন্য কল দেয়ার ক্ষেত্রে প্রতি মিনিটের খরচ পড়বে ভ্যাট ও অন্যান্য কর ছাড়া ৫ টাকা।

টেলিনর গ্রুপের স্বাস্থ্য ভিত্তিক অঙ্গ প্রতিষ্ঠান টেলিনর হেলথ নরওয়েতে নিবন্ধিত এবং এটি টনিক এবং এর সার্বিক কর্মকান্ডের জন্য চিকিৎসা সম্পর্কিত সর্বোচ্চ মানসহ অর্জনের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে। প্রতিষ্ঠানটির রয়েছে নিজস্ব ক্লিনিকাল টিম। এ টিমের দায়িত্বে রয়েছেন অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন উঠতি বাজারে ব্যাপক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন একজন প্রধান মেডিকেল কর্মকর্তা। টেলিনর হেলথ, এর স্বাস্থ্য বিষয়ক সকল লেখা শীর্ষস্থানীয় বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠান বুপা ও মায়ো ক্লিনিক থেকে নিয়ে থাকে। এছাড়াও, প্রতিষ্ঠানটির পরামর্শ নেয়ার ক্ষেত্রে রয়েছে পৃথক মেডিকেল উপদেষ্টা প্যানেল। যে প্যানেলে রয়েছেন দেশের প্রখ্যাত সব চিকিৎসকগণ। এদের মধ্যে আছেন অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আব্দুল মালিক, জাতীয় অধ্যাপক এম. আর খান এবং অধ্যাপক আজাদ খান।

দায়বদ্ধতার প্রতি সঙ্গতি রেখে ও ‘সমাজের ক্ষমতায়ন’ নিয়ে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে টেলিনর গ্রুপ টনিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্যসেবা অধিদপ্তরের (ডিজিএইচএস) সাথে কৌশলগত অংশীদারিত্বেরও ঘোষণা দিয়েছে। স্বাস্থ্যসচিব সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম এ অংশীদারিত্বের ঘোষণা দেন। ডিজিএইচএস ও টেলিনর হেলথের অংশীদারিত্বের লক্ষ্য  ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগ বৃদ্ধির মাধ্যমে বাংলাদেশের সব মানুষের জন্য মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণের সুযোগ বৃদ্ধি করা। এ অংশীদারিত্বের অংশ হিসেবে টেলিনর হেলথ ডিজিএইচএস- এর বিদ্যমান স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ক হেলপ লাইন স্বাস্থ্য বাতায়ন উদ্যোগে কার্যকরী ভূমিকা রাখবে। এছাড়াও, ইউনিভার্সাল হেলথ কভারেজ, স্বাস্থ্যসেবা সংক্রান্ত তথ্যপ্রযুক্তিগত আন্তঃপরিবর্তন এবং অসংক্রামক রোগ নিয়ে ডিজিএইচএস- এর নতুন সব প্রকল্প উদ্বোধনে টনিক ডিজিএইচএস- এর সাথে যৌথ অংশীদারিত্বে কাজ করবে।

টনিক নিয়ে টেলিনর হেলথের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সাজিদ রহমান বলেন, ‘শিশু মৃত্যুহার ও মাতৃস্বাস্থ্যের উন্নয়নের মতো সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাংলাদেশ অবিশ্বাস্য রকমের অগ্রগতি অর্জন করেছে। বাংলাদেশ এর সব বয়সের মানুষের জন্য সুস্থজীবন ও ভালো থাকা নিয়ে নতুন টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা সামলে উঠেছে। এ ধারাবাহিকতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার আমাদের নির্ভরযোগ্য মনে করেছে এজন্য আমরা সম্মানিত ও একইসাথে বিনীত বোধ করছি। বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে এক্ষেত্রে আমাদের ছোট্ট ভূমিকা রাখার ব্যাপারে আমরা উন্মুখ হয়ে আছি।’

সরকারি প্রতিনিধি ও টেলিনর গ্রুপের নির্বাহীরা ছাড়াও ২শ’র বেশি আমন্ত্রিত অতিথি রেডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেন হোটেলে টনিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। অতিথিদের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ক শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ, দূতাবাস ও উন্নয়ন সহযোগী কর্মকর্তা এবং গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়িক অংশীদারেরা উপস্থিত ছিলেন। টনিকের এ উদ্যোগ শুধুমাত্র বাংলাদেশে অভিনব ডিজিটাল সেবার উদ্বোধনই নয় এছাড়াও এটা টেলিনর হেলথের প্রথম কোনো সেবার উদ্বোধন। এর লক্ষ্য উচ্চমানসম্পন্ন স্বাস্থ্য বিষয়ক তথ্য, পরামর্শ ও সেবা বিস্তৃতশীল এশিয়ার সব গ্রাহকের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়া।  

 

grameenphone