মুক্তিযুদ্ধের বীরত্বগাথা নিয়ে গ্রামীণফোনের ডিজিটাল ভিডিও তথ্যভান্ডার নির্মাণের উদ্যোগ

ডিসেম্বর ০৬ 2016

দেশের মুক্তিযুদ্ধের বীরত্বগাথা  বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মুখ থেকে সরাসরি বর্ণনার মাধ্যমে ডিজিটাল ভিডিও সংগ্রশালা তৈরি করার উদ্যোগ নিয়েছে গ্রামীণফোন লিঃ। দেশব্যাপি মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন কাহিনী বা গল্প ভিডিও’র মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়াই এই পদক্ষেপের মূল লক্ষ্য। মুক্তিযুদ্ধের অনুপ্রেরণামূলক গল্পগুলো যেনো প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের মনে গেঁথে থাকে সে উদ্দেশ্যে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় গ্রামীণফোন এই উদ্যোগ নিয়েছে। 

আজ রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে গ্রামীণফোন তাদের এই উদ্যোগের কথা আনুষ্ঠানিকভাবে সাংবাদিকদের জানায়। উক্ত সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সরকারের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী জনাব আ.ক.ম মোজাম্মেল হক প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া অন্যান্যদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব এম এ হান্নান, গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পিটার বি. ফারবার্গ, প্রধান বিপণন কর্মকর্তা ইয়াসির আজমান এবং মন্ত্রণালয় ও গ্রামীণফোনের কর্মকর্তাগণ।

স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ ৪৫ বছর পার করেছে। এই ৪৫ বছরে অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মাঝ থেকে হারিয়ে গেছেন। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, প্রতি মুক্তিযোদ্ধার সাথে সাথে তার বীরত্বগাথার কথাও হারিয়ে যাচ্ছে। আমাদের তরুণ প্রজন্ম এসব যুদ্ধক্ষেত্রের গৌরবময় সত্য গল্পগুলো থেকে বঞ্চিত হওয়ার পথে।   

বেশ কয়েকটি তরুণ দল মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় সারাদেশে বীর মুক্তিযোদ্ধারা যে যেখানে আছেন সেখানে গিয়ে তাদের মুখ থেকে মুক্তিযুদ্ধের গল্পগুলো ভিডিও করার কাজ ইতিমধ্যে শুরু করে দিয়েছে। আলাদাভাবে সংগৃহীত সব মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি কথা ভিডিও ডকুমেন্টারির মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হবে। পরে সবগুলো ভিডিও একত্রিত করে অনলাইন ভিডিও সংগ্রহশালা তৈরি করবে গ্রামীণফোন যেখানে ফুটিয়ে তোলা হবে কিভাবে মুক্তিযোদ্ধার স্বাধীনা বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছেন। গল্প সংগ্রহ করতে দেশের ৬৪টি জেলায় মোট ২০টি দল একযোগে কাজ করবে। দলগুলো মুক্তিযোদ্ধাদের সরাসরি স্বাক্ষাৎকারের মাধ্যমে ভিডিও তৈরি করে নিয়ে আসবে। উল্লেখ্য, দেশের সব সাধারন জনগন তাদের পরিচিত মুক্তিযোদ্ধাদের তথ্য ওয়েবসাইটে (www.ekattorerkotha.com) প্রদান করতে পারবেন।    

এ প্রসঙ্গে উপস্থিত মাননীয় মন্ত্রী বলেন, আমরাও এধরণের একটি উদ্যােগ নেয়ার পরিকল্পনা করছিলাম। গ্রামীণফোনকে ধন্যবাদ ভিডিও লাইব্রেরি তৈরির কাজটি শুরু করায়। আমি আশা করবো যে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে তুলে ধরতে গ্রামীণফোনের মতো এগিয়ে আসবে।”

‘একাত্তরের কথা’ শীর্ষক এই উদ্যোগটি আনুষ্ঠানিকভাবে ৬ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়ে চলবে আগামি তিন মাস। আগামী বছরের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের দিন গ্রামীণফোন আনুষ্ঠানিকভাবে ভিডিও সংগ্রহশালাটি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের হাতে তুলে দেবে। ভিডিওটি সকলের জন্য অনলাইনে উম্মুক্ত থাকবে।

গ্রামীণফোনের সিইও বলেন, “দীর্ঘ সময় পার হয়ে যাওয়ায় আমরা অনেক বীর মুক্তিযোদ্ধাদের চিরতরে হারিয়ে ফেলেছি, আর তাই এখনই সময় ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আমরা মুক্তিযুদ্ধের একেবারে সত্য গল্পগুলো সংরক্ষণ করার। উদ্যোগটির মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের গল্পগুলো চিরকাল থেকে যাবে এবং প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের কাছে প্রেরণার সর্বোৎকৃষ্ট উৎস হয়ে থাকবে যারা পরবর্তীতে দেশকে নেতৃত্ব দেবে। আমরা জাতিগতভাবে স্বাধীন বাংলাদেশ এর স্থপতিদের কাছে চির কৃতজ্ঞ, আর তাদের গল্পগুলো অজানা থেকে গেলে যে আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম, এমনকি বর্তমানে তরুণ প্রজন্মের অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে।” 

বর্তমান প্রজন্মই হচ্ছে শেষ প্রজন্ম যারা কিনা সরাসরি মুক্তিযোদ্ধাদের মুখ থেকে মুক্তিযুদ্ধের কথা শুনতে ও জানতে পারবে, কিন্তু এই উদ্যোগ চিরকালের জন্য সংরক্ষিত করে রাখবে কিভাবে আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে একটি রাষ্ট্রকে স্বাধীন রাষ্ট্রে পরিণত করতে মুক্তিযোদ্ধারা ঝাপিয়ে পড়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধে। ডিজিটাল আকারে তৈরি হতে যাওয়া গল্পগুলো অনলাইে বিশ্বের সকল স্বাধীনচেতা মানুষ সহজেই দেখতে পারবে।  

grameenphone